"DUET Admission Test" এর জন্য কোচিং বাছাই !!

ইনবক্সে যারা-ভাইয়া,
-কোন কোচিং এ ভর্তি হবো?
-কোন কোচিং এ ভর্তি হলে আমার চান্স হবে?
-আমার ডিপার্টমেন্টের জন্য কোন কোচিং টা ভালো হবে?

প্রশ্ন করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছেন তাদের জন্য আজকের এই লেখা। শুরুতেই একটা কথা বলি, সেটা হচ্ছে চান্স পাওয়ার জন্য কোচিং কিছুইনা !! কি চমকে উটলেন তাইতো? জি, চমকে উঠারই কথা !! আবারো বলছি, কোচিং না করেও চান্স পাওয়ার নজির আছে !!
আমি নিজ চোখে দেখেছি, কোচিং না করেও, প্রাইভেট না পড়েও মাত্র ৩ মাস নিজে নিজে চেষ্টা করে ডুয়েটে চান্স পেয়েছে। আবার কোচিং এ কিছু ক্লাস করে এবং উইক টেস্ট, সিরিজ টেস্ট, প্রি মডেল, মডেল, ফাইনাল মডেলের ৩০% না দিয়েও শর্ট থেকে চান্স পেয়েছে।
এরা হচ্ছে লিজেন্ড, এরাই হচ্ছে এক্সেপশনাল !! কিন্তু "এক্সেপশনাল ইজ নট এন এক্সামপল" !! বিলগেটস, ওয়ারেন বাপেট, মুকেশ আম্বানির মতো ধনীদের সাথে যেমন আমাদের কৃষক, শ্রমিক আর মধ্যবিত্ত বাবাদের তুলনা চলেনা। তেমনি আইনস্টাইন, নিউটনদের মতো এমন এক্সেপশনাল ব্যাক্তিদের সাথে আমাদের তুলনা করা যাবেনা !!
আসলে নিজের ইচ্ছা শক্তি, নিজের প্যাশন, নিজের ব্যাক্তিত্ব, ফিউচারের প্রতি নিজের ডেডিকেশন, পরিশ্রম এসবই হচ্ছে ডুয়েটে চান্স পাওয়ার প্রধান নিয়ামক !! জন্মের পর থেকেই মৃত্যু অবধি আমাদের অভিভাবক মা-বাবা আর আশ্রয়স্থল হচ্ছে বাসা-বাড়ি। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের অভিভাবক শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগন। তেমনি কোচিং আপনাদের অভিভাবক ডুয়েটের বড় ভাইগন।
Images:Logo of DUET.
-জানেন কি??
গাজীপুরে বর্তমানে ৩০ টার ও বেশি কোচিং সেন্টার আছে, ৫ টার বেশি এক্সাম সেন্টার আছে। আসলে এতো কোচিং সেন্টার ছিলোনা, কিন্তু দিন দিন প্রতিযোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং এই প্রতিযোগীদের ভালোমানের সার্ভিস, ভালো গাইড লাইন, অর্থনৈতিক সাক্রিফাইসের জন্য প্রত্যেকটা বড় বড় ও বিভাগীয় জেলার পলিটেকনিক গুলো থেকে ডুয়েটে চান্স প্রাপ্ত বড় ভাইয়েরা তাদের ছোট ভাই-বোনদের উপরোক্ত সুবিধা গুলো দিতে কোচিং সেন্টার গড়ে তুলেছেন। ঠিক এই কারনেই ধীরে ধীরে কোচিং সেন্টারের সংখ্যা এতোটা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এই হার বাড়তেছে...
Images:Logo of Competition Coaching Center.
উপরোক্ত কারন গুলোর আগে কোচিং সেন্টার ছিলো হাতেগোনা কয়েকটা এবং সেগুলো সবই বিজনেস মাইন্ডের। যেমনঃ অপটিমাম, একমি, টট, কংক্রিট, কমপোর্ট, ইদানিং আরপিআর নামে একটা হইছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ধীরে ধীরে উপরের কারন গুলোর কারনে এবং ডুয়েটের ভিতরে প্রত্যেকটা বড় পলিটেকনিক, বিভাগীয় পলিটেকনিক বা বিভাগীয় শহরকে কেন্দ্র করে অনেক আঞ্চলিক সংগঠন গড়ে উঠেছে। আর সেই সংগঠন থেকে উদ্যোগী হয়ে ডুয়েটিয়ান'রা নিজ নিজ পলিটেকনিক এর ছোট ভাইবোনদের বিভিন্ন সুবিধা দিতে, বিভিন্ন হয়রানি থেকে মুক্তি দিতে তারাও কোচিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে।
Images: Logo of ACME Coaching Center.
যার ফলে অনেক গুলো কোচিং সেন্টারের আত্নপ্রকাশ ঘটেছে ধীরে ধীরে। বিশেষ করেঃ
-ইন্টারনেট (চট্রগ্রাম, কক্সবাজার পলি.)
-কনফিডেন্ট (রাজশাহী, রাজশাহী মহিলা,চাপাই নবাবগঞ্জ, নওগাঁ পলি.)
-ঢাকা ডুয়েট এডমিশন (ঢাকা, ঢাকা মহিলা পলি.)
-ক্রিয়েটিভ (ময়মনসিংহ পলি.)
-কমিটমেন্ট (টাঙ্গাইল পলি. ও টাঙ্গাইল টেক্সটাইল )
-কম্পিটিটিশন (কুমিল্লা, কুমিল্লা সার্ভে, চাঁদপুর, লক্ষীপুর, বি-বাড়িয়া পলি.)
-অরবিট কোচিং (ফেনী পলি.)
-ব্রিলিয়ান্ট কোচিং (কুষ্টিয়া পলি.)
-প্রকৌশলী (রংপুর, কুঁড়িগ্রাম পলি.)
-মেমোরি (পাবনা পলি.)
-সার্কেল (বরিশাল,ভোলা,পটুয়াখালী পলি.)
-খুলনা (খুলনা, সাতক্ষীরা পলি.)
(নোটঃ সব নামের শেষ কোচিং সেন্টার/হোম লাগাই নিবেন)!!
Images:Logo of Confident Coaching Center.
আরো দু-চারটা কোচিং সেন্টার আছে যেগুলোর নাম এই মূহুর্তে মনে আসছেনা। একটা সত্য কথা হচ্ছে, কোন কোচিং সেন্টারই চায়না যে, তার কোচিং এ ভর্তি হয়ে কেউ চান্স না পাক, সব কোচিং ই চায় তার কোচিং এর সব ছাত্র-ছাত্রী চান্স পাক এবং সেই অনুযায়ী গাইডলাইন, টিউটর, হোম সার্ভিস, কোর্স প্লান, রুটিন, এক্সাম শিডিউল দিয়ে থাকে।
আরো একটা মহাগুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে এইখানে যত কোচিং এর নাম উল্লেখ করছি সব কোচিং এই ডুয়েটিয়ানরাই ক্লাস নিয়ে থাকেন, কোচিং প্যানেলে ডুয়েটিয়ানরাই থাকেন। বাহিরের কোন টিউটর বা ডুয়েটের কোন টিচার দ্বারা কোন কোচিং পাঠদান করায়না বা দায়িত্বে থাকেনা। সবাই চেষ্টা করে ভালো মানের সার্ভিস, ভালো বুঝাতে পারে এমন টিউটর দিয়ে ক্লাস নিতে।

কিন্তু আপনাকে কোন কোচিং ই ডুয়েট এডমিশনের সব টপিকসের উপর স্পেশাল টিউটর দিতে পারবেনা। সবমিলিয়ে ৩০ টা টপিকস থাকলে আপনি হয়তো ২৫ জন ভালো টিউটর পাবেন, বাকী ৫ জন ও হয়তো ভালো টিউটর, কিন্তু আপনি বুঝবেন না ঐ ভাইয়া কি বোঝায়, হয়তো আপনার অন্য বন্ধু, ব্যাচমেট ভালো বুঝবে এবং এটা স্বাভাবিক একটা বিষয়।
কোন কোচিং ই আপনাকে ১০০% সার্ভিস দিতে পারবেনা, আপনাদের সবার মন মতো ১০০% স্পেশাল টিউটর দিতে পারবেনা। এইক্ষেত্রে কেউ ৮৫% দিতে পারবে, কেউ ৯০% দিতে পারবে। মোদ্দাকথা হলো যতগুলা কোচিং আছে কেউ কারো থেকে কম না, সবাই (১৮-২০) এর মধ্যেই আছে। কেউ ২০ এ ২০ না, আবার কেউ ২০ এ ১০ ও না।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে-
আপনি কোন কোচিং এ ভর্তি হবেন??
-আমি বলবো, যে কোচিংটায় আপনার পরিচিত বড় ভাই আছে, যার কাছে আপনি সমস্যার কথা ফ্রি-লি বলতে পারবেন, যাকে কল দিয়ে আপনার সমস্যার কথা বললে, নিজের হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও আপনার কাছে ছুটে যাবে, আপনার সমস্যা সমাধান করবে, অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাবে, আপনার সমস্যা বুঝতে পারবে আপনি সেই কোচিং টাতেই ভর্তি হোন। হোক সেই কোচিং এ ছাত্রসংখ্যা ৫০ জন, হোক ১০০০ জন।
সব কোচিং এই কোচিং ফি প্রায় সমান। ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ এর মধ্যে। আপনার সিজিপিএ ৩.৭৫+ হলে বিভিন্ন কোচিং এ ভর্তির উপর বিভিন্ন % আকারে কিছুটা ছাড় আছে। আর আঞ্চলিক কোচিং গুলোতে আর্থিকভাবে দূর্বল স্টুডেন্টদেরকে একটু বেশি ছাড় দিয়ে থাকে এবং কি কেউ যদি অসম্ভব মেধাবী হয় কিন্তু সে আর্থিকভাবে দূর্বল, তাকে সম্পূর্ন ফ্রি কোচিং এর সুযোগ ও দিয়ে থাকে।
আবার আপনি যদি মনে করে এই কোচিং থেকে গতবার এতো বেশি চান্স পাইছে, অমুক কোচিং থেকে এতোজন চান্স পাইছে। আরে ভাইয়া ও আপু গন, Here, I Have a Question !! জানেন কি??
ডুয়েটে সীট হচ্ছে ৫৫০+, প্রতিবার এডমিশন শেষে সব কোচিং যেভাবে প্রচার করে,যেভাবে চান্স প্রাপ্তদের লিস্ট করে পোস্টারিং ও প্রসপেক্টাস তৈরি করে। সব হিসেব করলে দেখা যাবে ডুয়েটে ২০০০+ স্টুডেন্ট চান্স পাইছে !!
একটা কোচিং এ ৫০০+ স্টুডেন্ট থেকে যদি ৪০+ স্টুডেন্ট চান্স পায়, আবার একটা কোচিং এ ১০০+ স্টুডেন্ট থেকে যদি ১৫+ স্টুডেন্ট চান্স পায়। তাহলে কোন কোচিং টা সেরা?? আপনার চোখে প্রথমটা হলেও আমার চোখে দুটাই সমান, বরং দ্বিতীয়টাই সেরা আমার কাছে। কিন্তু আপনারাতো ৫০+ চান্স পাইছে, এটা দেখেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন, ও ভাই আগে খোঁজ নিয়ে দেখেন কতজন পরীক্ষা দিয়ে ৫০+ জন চান্স পাইছে ঐ কোচিং থেকে।
এবার আসুন কোচিং না করে যদি কোন বড় ভাইয়ের কাছে একা বা ৩-৪ গ্রুপ করে প্রাইভেট পড়েন, তাহলে কেমন হবে? জি, আমি মনে করি এটাও ভালো হবে।
কিন্ত এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, পরীক্ষা দিবো কোথায়? ঐ যে বললাম না, এক্সাম সেন্টার আছে ৪-৫ টা, সেগুলার দুইটাতে পুরো বছর পরীক্ষা দেওয়ার জন্য অফার বেছে নিবেন। আবার প্রাইভেটের ভাইয়াও অবশ্যই অনেক পরীক্ষা নিয়ে থাকে নিজ দায়িত্বে। কিন্তু আপনার বেশি প্রতিযোগীর দরকার মনে করলে আপনি এই এক্সাম সেন্টার গুলোতে এক্সাম দিতে পারেন।
আর যারা বিএসসি ইন আর্ক. এ ভর্তি কোচিং করবেন, তারা অবশ্য চোখ বুঝে "আর্কিটেকচার কোচিং হোম" এ ভর্তি হতে পারেন, এছাড়াও অপটিমাম, কমপোর্ট কোচিং এ ভর্তি হতে পারেন। আর যারা টেক্সটাইল ডিপার্টমেন্টের তারা কমিটমেন্ট কোচিং এর টেক্সটাইল শাখায়, বা বড় কোন কোচিং এ ভর্তি হতে পারেন (কারন টেক্সটাইল আর আর্কিটেকচার দুইটাই আলাদা ঘরানার ডিপার্টমেন্ট)।
আর নিজস্ব সংগঠন এর কোচিং এ ভর্তি না হলে কিংবা আপনার বেশি প্রতিযোগীর দরকার হলে গাজীপুরে এসে, নাম ডাক ছড়ানো দু চারটা কোচিং এ দু-চারটা ক্লাস করে নিজেই ভালো বুঝে সিদ্বান্ত নিতে পারেন। তবে আমি একান্তই ব্যাক্তিগত মতামতে বলবো। সবার আগে নিজস্ব আঞ্চলিক কোচিং এ ভর্তি হতে চেষ্টা করবেন।
কারন আপনাদের বড় ভাইয়েরা আপনাদের সেবা করার জন্যিই বসে আছে। কিন্তু যদি আঞ্চলিক কোচিং এ ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কম হয়, তাহলে উপরের ব্যাবসায়িক কোচিং গুলোর যে কোন একটাতে ভর্তি হতে পারেন, যদি আপনার বেশি প্রতিযোগীর দরকার হয়। আবার আপনি কিন্তু এক্সাম সেন্টার গুলোতে এক্সাম দিয়েও সবার সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারেন। এছাড়াও একান্তই কারো কোন কোচিং সম্পর্কে জানতে ইচ্ছে করে, আমার ইনবক্সে ঐ কোচিং সম্পর্কে জানতে পারেন, তবে আগে খোঁজ নিয়ে দেখুন আপনার কোন বড় ভাইটা সম্প্রতি ডুয়েটে চান্স পেয়েছে, তার কাছ থেকে আমার চাইতেও ভালো জানতে পারবেন।
একটা কথা মাথায় রাখবেন-
"চান্স আপনাকে কোচিং দেবেনা, কোচিং শুধুমাত্র গাইডলাইন দেবে। চান্স দেবে 
আপনার পরিশ্রম, আপনার চেষ্টা, ডুয়েটের প্রতি আপনার ডেডিকেশন আর আপনার স্বপ্ন পূরণের তাড়না !!"
Thanks All
Saifulläh Amïn
CSE 14th Batch,DUET.

No comments

Powered by Blogger.