"এটা শুধু স্বপ্নদেখা স্বপ্নবাজদের জন্য !!"

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা পলিটেকনিক কি জিনিস? সেটা পলিটেকনিকে ভর্তি হওয়ার পরেও পুরোপুরি জানতে পারিনি আগে জানাতো দূরের কথা। কারন ভর্তি হওয়ার পরে ১ম সেমিষ্টারের বই কেনার পর মনে মনে ভাবলাম, ছোট ছোট ৮-১০ টা বই, একবছরে পড়ে তামা তামা করে ফেলবো !! এই ভুল ধারনা ভাঙ্গে ১ম সেমিষ্টার শুরুর কিছুদিন পরেই, যখন বন্ধুরা আলোচনা করে ৬ মাসে এক সেমিষ্টার, আর এই বই গুলো ছয় মাসের।
আসলে পলিটেকনিক নিয়ে কখনো ভাবার সময় আসেনি স্কুল লাইফে, স্বপ্ন দেখছিলাম মেডিকেলে পড়বো !! কিন্তু মফস্বল ফ্যামিলর ছেলে হিসেবে এবং মাথার উপর ছায়ার মতো অনেকগুলা বড় ভাই থাকার কারনে কখনো নিজের সিদ্বান্ত নিজে নিতে পারতাম না। এই জন্যিই এসএসসি'র পরে "নোয়াখালী সরকারি কলেজে" সাইন্সে মেধা তালিকায় ভর্তি হয়ে ৩ দিন ক্লাস করার পরেও ভর্তি বাতিল করে বড় ভাইয়ার সিদ্বান্তে পলিটেকনিকে ভর্তি হই। ভর্তি হওয়ার পরে সবচেয়ে কষ্ট লাগতো তখন, যখন হলের বড় ভাইয়েরা পরিচিত হতে এসে বা বন্ধুরা এসএসসির জিপিএ আর ডিপ্লোমার ডিপার্টমেন্ট জানার পর আপসোস করে। আর বলে তুমি এই ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হইছো কেন?? তুমিতো সবচেয়ে ভালো ডিপার্টমেন্ট পেতে !!
আমারতো মাথায় হাত, ভাবনায় পড়ে গেলাম, খুব হতাশ হতে লাগলাম, বড় ভাইয়াকে কিছু জানাতে সবচেয়ে বেশি ভয় পেতাম, এই জন্য যে ভাইয়া ভর্তি করাইছেন তার সাথে আলাপ করলাম। উনি বললেন তাহলে একবছর লস দিয়ে পরেরবার ভালো কোন ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হওয়ার জন্য। সেটা আর হলোনা, কারন নিজেই চাইনি নিজের জীবন থেকে একটা বছর লস করতে !!
ডিপ্লোমার শেষ পর্যায়ে, তখন ও জানতাম না ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এর ফিউচার কি, আমিইবা কি করবো ফিউচারে? এর উচ্চশিক্ষার পরিধি কি , কই চাকরি করবো, কি চাকরি পাবো, বিএসসি কই করবো? এসব কিছুই আমার মাথায় আসেনাই। ডিপ্লোমা ষষ্ঠ পর্বের কথা বাহির থেকে হলে এসে শুনলাম- ডুয়েট, গাজীপুর থেকে নাকি এক বড় ভাই এসেছেন, ডুয়েটের নানান স্বপ্নময় গল্প ও বিভিন্ন কথা বলে গেছেন। ডুয়েটের ব্যাপারে পরে বিস্তারিত জানলাম বন্ধু ও এক ম্যাডামের কাছ থেকে, ম্যাডাম তখন AMIE এর কথাও বলছেন।
থার্ড ইয়ার শেষ করার পরেও আমার মাথায় ডুয়েট এডমিশনের ব্যাপারে কোনকিছুই আসেনি। অষ্টম পর্বের শুরুর দিকে একমি কোচিং থেকে এক বড় ভাই সহ ২/৩ জন ডুয়েটিয়ান বড় ভাই আমাদের কুমিল্লা পলিটেকনিকে গেলেন। তারমধ্যে একজন ছিলেন কুমিল্লা পলিটেকনিকেরই। ভাইয়েরা আমাদের সাথে কথা বললেন ক্লাসে, এক ভাইয়ের নাম্বার নিলাম, ধীরে ধীরে ভাইয়ের কাছ থেকে ডুয়েট এডমিশন সম্পর্কে জানতে শুরু করলাম। স্বপ্ন দেখতে লাগলাম, ভাবতে লাগলাম, কিভাবে ফ্যামিলি ম্যানেজ করা যায়। অবশেষে ডিপ্লোমা শেষ করে, ঐ ভাইয়ের হাত ধরেই কোচিং এ আসলাম। শর্ট কোর্সের ৬-৭ মাসে ২-৩ মাসই বাড়িতে কাটিয়ে দিছি, এতো কম সময়ে চান্স হবেনা বলে পড়ালেখা করিনি তেমন।
পরীক্ষা দিলাম, চান্স হবেনা এটাও জানতাম। কিন্তু জীবনের সবচেয়ে হতাশার, কষ্টের, ডিপ্রেশনের সময় গেছে ঐসময় টাতেই। অনেকদিন বাড়ি ছিলাম, ঢাকায় আসলাম, বিজ্ঞপ্তি দেখে একটা প্রাইভেট পলিটেকনিকে গিয়ে সিভি দিয়ে আসলাম। কিন্তু তারা ডাকেনি আমায়। হতাশা বাড়তে লাগলো, ঢাকায় ইমেডিয়েট বড় ভাইয়ের মেসে থাকতাম।
ভাইয়া অফিসে যেতেন, আর আমি দিনরাত হতাশায় নিমজ্জিত অবস্থায় রুমের লাইট অফ করেই কাটিয়ে দিতাম, শুধু চিন্তা করতাম কি করবো? কোথায় গেলে একটা চাকরি পাবো? বাবাকে কল দিলাম, কাঁদোকাঁদো সুরে বোঝাতে লাগলাম। বাবা রাজি হলেন, আবার আসলাম গাজীপুরে , ধরতে গেলে গাজীপুরে সব কোচিং এর লং কোর্সে একদম সবার পরে আসছি। একটা কোচিং এর সাতটা লং ব্যাচের আমরা ২২ জন ছিলাম লাস্ট ব্যাচে। বাকীটা ইতিহাস...
এতোক্ষন এতো কাহিনী বলার একটাই কারন। সময় বদলাইছে, জাভা ফোনের দিন শেষে এনড্রয়েড যুগ আসছে, যুগ ডিজিটালাইজড হচ্ছে, স্কুল জীবন থেকেই সবাই ফেসবুক, ইমু, ইন্সটাগ্রাম চালাচ্ছে, সবদিকের খবরাখবর রাখছেন। অথচ ডিপ্লোমায় আমার হাতে ছিলো একটা নোকিয়া ১২০২ মডেলের মোবাইল, ফেসবুক আইডি খুলছি ঢাকায় ইন্টার্নি করতে এসে ২১ ই নভেম্বর ২০১১ সালে !!
অথচ আপনারা এখন সবাই প্লান করেই ডিপ্লোমায় ভর্তি হন, সবকিছু জেনে, ডিপ্লোমার ভবিষ্যত জেনে, চাকরির বাজার জেনে, উচ্চশিক্ষার সুযোগ জেনে শুনে ডিপ্লোমায় ভর্তি হন। কিন্তু সেই সুযোগটা আমি পাইনি, আমাদের সময় অনেকেই পায়নি। আপনারা এখন ডিপ্লোমায় ভর্তি হয়েই ডুয়েটের স্বপ্ন দেখা শুরু করতেছেন, অথচ আমরা এডমিশনে এসেই জানতে পারছি ডুয়েট সম্পর্কে।
তাহলে একবার ভাবুনতো, আপনারা আমাদের চাইতে কত এগিয়ে আছেন? কতটা আপডেটেড, কতটা স্বপ্নবাজ, কতটা সচেতন? ঠিক এই কারনেই দিন দিন প্রতিযোগিতা বাড়ছে, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, সিলেবাস পাল্টাচ্ছে, সময়ের ব্যাবধান কমছে, নাম্বারিং সিস্টেম চেঞ্জ হচ্ছে। হবেইতো, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে না চললে যে আপনি, আমিও পিছিয়ে যাবো। যেমনটা পিছিয়ে গেছে নোকিয়া ফোন কোম্পানি এন্ড্রয়েডের সাথে পাল্লা দিতে পারেনি বলে। ঠিক এসব কারনেই আপনাকে আগ থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু কর‍তে হবে...
এই যে আপনারা যারা এখন ডিপ্লোমায় ১ম, ৩য়, ৫ম, ৭ম সেমিষ্টারে থাকা অবস্থাতেই ইনবক্সে এসে মিছিল করতেছেন ভাইয়া-
-ডুয়েট আমার স্বপ্ন। ভাইয়া-
-আমি ডুয়েটে চান্স পেতে চাই। ভাইয়া-
-চান্স পেতে এখন থেকে আমাকে কি কি কর‍তে হবে?
Logo of DUET.
সত্যিই বলছি, আপনাদের এমন আগ্রহ দেখে আমি অবাক হচ্ছি, এতো সময় নিয়ে স্বপ্ন দেখতেছেন, এখন থেকেই ডুয়েট নিয়ে ভাবতেছেন, সত্যিই অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে।
হ্যাঁ, যারা পলিটেকনিকে থাকতেই ডুয়েটকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন, এবং সেটা পূরণ করার জন্য হেল্প ও টিপস চাচ্ছেন। তাদেরকে বলছি- আপনি পলিটেকনিকে থাকা অবস্থায়।
- প্রথমত আপনার সিজিপিএ'র দিকে লক্ষ্য রাখবেন, সিজিপিএ যেনো কোন ভাবেই ৩.০০ এর নিচে না নামে। চেষ্টা করবেন নিজের সিজিপিএ'টা ৩.৫০+ রাখার জন্য।
-দ্বিতীয়ত, আপনি যদি ডুয়েটকে নিয়ে লালন করা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চান, তাহলে পলিটেকনিকে থাকা অবস্থায় আপনি- ইন্টারমিডিয়েটের গনিত(ফুল সিলেবাস), ফিজিক্স (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র), রসায়ন (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) এই তিনটা বিষয় সম্পূর্নরুপে পড়ে ফেলতে পারেন।
সেটা করতে পারেন আপনি কোন ভার্সিটি পড়ুয়া ভাইয়ের কাছে বা কোন কলেজের শিক্ষকের কাছে। ৪-৫ জন বন্ধু মিলে গ্রুপ করে প্রাইভেট পড়তে পারেন তিনটা বিষয়ই। স্বপ্নবাজ বন্ধুরা মিলে ফিজিক্সের সূত্র, গনিতের সূত্র, শত শত সূত্রের কনভারশন, সব রকমের এককের কনভারশন, রসায়নের বিভিন্ন রকমের মৌলের নাম, যৌগের নাম, বিভিন্ন প্রতীক, সংকেত ও যোজনী , বিভিন্ন রাসায়নিক সংকেত এখন থেকে মুখস্থ ও ঠোটস্থ করে ফেলতে পারেন। ইংলিশের ক্ষেত্রে গ্রামার পার্ট (ন্যারেশন, কারেকশন, ভয়েস চেঞ্জ, ট্রান্সলেশন, প্রেজ এন্ড আইডমস, রাইট ফর্ম অফ ভার্ব বাদবাকি সিলেবাস অনুযায়ী) এখন থেকেই শুরু করে দিন একটু একটু করে।
ডিপার্টমেন্ট পার্ট নিয়ে একটুও ভাববেন না এখন। পলিটেকনিকে ডিপার্টমেন্ট যা পড়ার দরকার, নিজের পরীক্ষার বা ক্লাসের জন্য পড়বেন, ডুয়েটের জন্য ডিপার্টমেন্ট পার্ট নিয়ে চিন্তা পলিটেকনিকে থাকতে করা লাগবেনা, সেটা এডমিশনে এসে করলেই হবে। ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস জানতে ভিজিট করুনঃ http://www.duet.ac.bd/
দরকার হয় ছোট্র একটা ট্যুরের প্লান করে বন্ধুরা মিলে একদিনের জন্য গাজীপুর আসবেন, ডুয়েট ক্যাম্পাসে ঘুরে যাবেন, আমি কথা দিচ্ছি ক্যাম্পাস ঘুরে দেখার পরে আপনার স্বপ্নটা থ্রিজি স্পিড থেকে বেড়ে ফোর পয়েন্ট ফাইভ জি স্পিড হয়ে যাবে !! এই ট্যুরে এসে যাওয়ার সময় একটা "কুয়েশ্চন ব্যাংক" নামক একটা বই এবং নন ডিপার্টমেন্টের হরেক রকমের নন ডিপার্টমেন্ট থেকে চুজ করে যেকোন একটা গাইড, ডুয়েট গেইটের যে কোন লাইব্রেরি থেকে কিনে নিয়ে যেতে পারেন।
এটাও মনে রাখবেন, সবকিছু নিয়ে একসাথে হুমড়ি খেয়ে পড়ার দরকার নেই, ধীরে ধীরে প্লান করে, একটু একটু করে এগুতে থাকেন। কিন্তু এমনটা যেনো না হয় ডুয়েট নিয়ে ব্যাস্ত থাকতে থাকতে ডিপ্লোমার সিজিপিএ'র ৩.০০ এর নিচে চলে আসলো, রেফার্ডের এর পাহাড় হয়ে গেলো। মাথায় রাখবেন ডুয়েটে এপ্লাই করতে সর্বনিম্ন সিজিপিএ ৩.০০ লাগবেই। অন্যথায় কিন্তু আম ও হারাবেন, ছালা ও হারাবেন !!
Thanks All
Saifulläh Amïn
CSE 14th Batch, DUET.

No comments

Powered by Blogger.